ঢাকা প্রতিনিধিঃ রাজধানীর বংশালের আগামাসী লেনে নির্মানাধীন ভবন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া লাশটি আহমেদ ভাওয়ানী স্কুল এন্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র কিশোর ইমনের। তাকে হত্যা করার আগে নির্মম নির্যাতন করে রশি দিয়ে পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ পরিদর্শক রাসিদুল হাসান। এ ঘটনায় ৪ কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে।
সরেজমিনে আগামাসি লেনের ৫৯/১ বাড়ির তৃতীয় তলায় নিহত ইমনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাবা বাবুল হোসেন ও মা রেনু বেগম বারবার মূর্চা যাচ্ছেন। জ্ঞাণ ফিরলেই একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে পাগল প্রায় বাবা-মা বিলাপ করে কান্না করছেন। বোন বর্ষা ও ভাবনাও পাগল প্রায়। ছোট ভাইকে হারানোর বিষয়টি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।
ইমনের চাচা বেল্লাল হোসেন জানান,গত ১৮থেকে ২০বছর আমরা ওই এলাকায় বসবাস করছি। বঙ্গবাজারের রোজ গার্ডেন মার্কেটে আমরা জিন্স প্যান্টের ব্যাবসা করে আসছি। কোনদিন কারো সঙ্গে মনোমলিন্য পর্যন্ত হয়নি। তারপরও কেন আমাদের এতবড় ক্ষতি হলো!
তিনি আরও বলেন, রোববার বিকালে প্রথমে ইমনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও ডাক্তার রাত ১১টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে রেফার করা হয়। সোমবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আগামাসী লেন মসজিদের সামনে জানাজা নামাজ শেষে গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর সদর থানার মান্দারী বাজার খানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য রওনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অকালে কিশোর ইমনের হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্কুলের সহপাঠি ও শিক্ষকদের মাঝেও শোকের ছায়া নেমে আসে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ইমনের সহপাঠীদের। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ যেন নিস্তার না পান- এমন দাবি সহপাঠীদের।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, রোববার কিশোর ইমনের লাশ উদ্ধারের পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট তৎপর হয়ে উঠে। তাদের তৎপরতায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪জন কিশোরকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই চলছে। এদের মধ্যে ইয়াছিন নামে এক কিশোর রয়েছে।
তবে অন্য আটককৃতদের বিষয়ে তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ।স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, আগামাসী লেন ও বাংলাদেশ মাঠ কেন্দ্রিক একটি কিশোর গ্যাং দীর্ঘদিন থেকে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাদক ব্যাবসা, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে ওই গ্যাংটি। তুচ্ছ ঘটনার জেরে তারা ইতোমধ্যে কোপাকুপির মত ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিক্টিমের পরিবারও তাদের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছে। এদের মধ্যে সাত রওজা এলাকার লিমন, আকাশ, সিহাব, বাচ্চা সিপাত, দাঙ্গা রাকিব। এরা সবাই বাংলাদেশ মাঠ সংলগ্ন আলাবাড়ি সুমিদ গ্রুপের সদস্য। হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকে সোহাগ নামে ওই কিশোর গ্যাংয়ের এক নেতা স্বপরিবারে পালাতক রয়েছে বলে জানান তারা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।